Responsive Ads Here

Sunday, January 27, 2019

রাজকন্যা ও রাজ্য একসাথে

একদেশে এক চাষা ছিল, সে ছিল খুব গরীব। চাষী এতটাই গরীব যে প্রতিদিন তাঁর বউয়ের কাছে বকা খায়। ওই চাষী একদিন রাগ করে বাড়ি থেকে অনেক দূরে চলে যায়। যেতে যেতে এক গভীর বনের ভিতরে যখন গেল তখন দেখল যে  সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তখন ভেবে পেল না যে সে এখন কোথায় যাবে ? হঠাৎ দেখল একটা অতি সুন্দর দালানবাড়ী। সে ভাবল যে সেখানে গেলে হয়ত একটা আশ্রয় খুজে পাবে। তাই সেখানে কাছে যেতে না যেতে দেখল এক সুন্দরী রমনী তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, চাষী সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিল। সেই রমনী চাষীকে মনের মত করে যত্ন আদরের মাধ্যমে আপ্যায়ন করল। চাষী খুবই খুশী হল।
চাষী খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তাই তার খুব ঘুম পাচ্ছিল । সেদিনের মত ঘুমিয়ে পড়ে। চাষী ধীরে ধীরে মহিলার অপরুপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে ব্যকুল হয়ে পড়ে। বিয়ে করে ফেলে একদিন সেই রুপবতী নারীকে। এই ভাবে চাষীর দিন যায় দিন আসে। একদিন হঠাৎ করে তার গ্রামের সেই ফেলে আসা স্ত্রীর কথা মনে পড়ে যায়। ভাবল যে, ”আমি যেমন ভাল আছি সেও হয়ত এখানে আসলে ভাল থাকবে” । একদিন খাওয়ার সময় দ্বিতীয় স্ত্রীকে বলল যে তার প্রথম স্ত্রী আছে। যাকে সে গ্রামে রেখে এসেছে। তার কাছে জিগাসা করল যে সে তার প্রথম স্ত্রীকে এখানে নিয়ে আসবে কিনা? কথাটি শুনে দ্বিতীয় স্ত্রী সম্মতি দিল প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে আসার জন্য।
বাড়ি যাওয়ার দিন ঠিক হল এবং চাষী যে দিন বাড়ি রওনা হল, দ্বিতীয় স্ত্রী চাষীর কাছে সোনাদানা, রুপার গহনা পুটলি ভরে দিল যেন চাষী ওই সমস্ত সোনারুপা হীরে মুক্তার লোভে তার কাছে আবার ফিরে আসে। চাষী গ্রামে যেতে যেতে রাত্র হয়ে গেল। চাষীর প্রথম বউ চাষীকে দেখে খুবই খুশি হল। সে চাষীকে জিগাসা করল “তুমি এত দিন কোথায় ছিলে?” চাষী বলল “আগে তো আমায় খেতে দে, বিশ্রাম করি। তারপর ধীরে ধীরে সব বলব তোকে।”
তারপর চাষী রাত্রে শুয়ে শুয়ে সব তার প্রথম বউকে বলতে লাগল। এমন কি সব সোনাদানা, হীরের গহনা চাষী তার বউ কে দেখাল। তখন তার বলল “তুমি তো কোনো মায়জালে পড়নি ?” তাই না ?
চাষী বলল “ওরে না রে।”
চাষীর বউ চাষীর কথা বিশ্বাস করে পরের দিন রওনা দিল দুজনে সেই বাড়ির দিকে। পৌছে গেল সেই গভীর জঙ্গলের বাড়ীতে। সেদিনের মত সেই বউ তাদের দুই জনকে খুবই আদর আপ্যায়ন করল। কিন্তু চাষীর প্রথম বউয়ের মোটেও ভাল লাগছিল না। সে শুধু ভাবছিল এই গভীর জঙ্গলের মধ্যে একটাই বাড়ি আর একজনই মহিলা। আর কোথাও কোনো জনমানব নেই। কিন্তু তারপরও তারা সুখেদুখে দিন কাটিয়ে দিচ্ছিল । কিছুদিন পর প্রথম বউয়ের একটা ছেলে সন্তান হল। সেও আস্তে আস্তে বড় হল। 
কিন্তু চাষীর প্রথম বউ একদিন ভাবল যে আজ তার সতীন বাড়ীতে নেই। তাই সে ভাবল  যে এত গুলো ঘর আর সব গুলো ঘরে তালা দেয়া আছে, কিন্তু কোনো মানূষ নেই। আমি কিভাবে তালা গুলো খুলব আর ওই সব ঘরে কি কি আছে তা আমি কীভাবে দেখব। তখন সে ভাবল যে যখন তার সতীন ঘুমিয়ে থাকবে তখর সে ওইসব ঘরের তালার চাবি চুরি করবে। 
ঠিক একদিন তার সতীন ঘুমিয়ে আছে, এমন সময় সে আস্তে আস্তে তার ঘরে যেয়ে তার ঘরে গিয়ে আস্তে করে চাবিটা নিয়ে নিল, যেন সে টের না পায়। সে চাবি টা নিয়ে এল এবং একটা ঘরের দরজা খুলল। খুলে দেখল সে ঘরে শুধু সোনা আর একটা ঘর খুলে দেখল যে সেখানে শুধু রুপা আর একটা ঘর খুলে দেখল সেখানে শুধু মানুষের হাড়, আর মাথার খুলি। তখন তার ভয় লাগে আর ভাবে যে সে আর কেউ নয়, সে হল এক ভয়ানক রাক্ষসী। সে বুঝতে পারল যে তারা এক ডাইনি আর রাক্ষসীর বাড়িতে থাকে। এখন তার ছেলে আর চাষীকে বলল সব কথা।
কিন্তু চাষী বিশ্বাস করল না। কিন্তু তার প্রথম বউ তার ছেলে কে বুঝিয়ে বলল বাবা তুই পালিয়ে যা। আমরা হয়ত আর বাঁচব না। তাই তুই জীবন নিয়ে ফিরে যা। চাষী বউ ছেলেকে একটা ধারাল অস্ত্র দিল, একটা ঘোড়া দিল, আর একটা ঘটিতে করে এক ঘটি দুধ দিল। বলল “বাবা যখন দেখবি ঘটির দুধটা ঘুরছে, তখন বুঝবি ওই রাক্ষসি তোর বাবাকে তাড়াচ্ছে, যখন দুধটা লাল হয়ে যাবে তখন বুঝবি রাক্ষসী তোর বাবাকে খাচ্ছে, আর যখন দুধটা স্থীর হয়ে যাবে তখন বুঝবি তোর বাবাকে খেয়ে ফেলেছে।”
আবার যখন দুধটা ঘুরবে, তখন বুঝবি রাক্ষসী তোর মাকে তাড়াচ্ছে । যখন দুধটা লাল হয়ে যাবে, তখন বুঝবি রাক্ষসী তোর মাকে খাচ্ছে আর যখন দুধটা স্থীর হয়ে যাবে তখন বুঝবি তোর মাকে খেয়ে ফেলেছে।”
”আবার যখন দুধটা ঘুরবে তখন বুঝবি রাক্ষসী তোকে তাড়া করেছে। তুই রাক্ষসী কে কখনও ছেড়ে দিসনা বাবা, রাক্ষসী কে মারার জন্য তোকে এই তলোয়ার টা দিলাম।” এই বলে সে ছেলে কে বিদায় দিল। ছেলে যাত্রা শুরু করল এবং ঘোড়ার বেগে চলতে লাগল।
হঠাৎ এই কথা রাক্ষসী শূনে ফেলল। রাক্ষসী শুনে তার বিশাল রাক্ষসীর রুপ ধারন করে তার বাবাকে তাড়া করল আর খেতে গেল।ওদিকে ছেলে দেখল যে তার ঘটির দুধ ঘুরছে। ছেলে চিন্তায় পড়ে গেল। কিছু সময় পর দেখল যে তার ঘটির দুধ ঘুরছে। তখর তার আরও চিন্তা বেড়ে গেল। আরও কিছু সময় পর দেখল তার ঘটির দুধ লাল হয়ে গেছে। তখন সে বুঝে গেল যে রাক্ষসী তার বাবাকে খেয়ে ফেলেছে। ছেলেটি মনের কস্টে আবার চলতে শুরু করলো।
কিছু দূর যেতে না যেতে আবার দেখল যে তার ঘটির দুধ ঘুরছে, তখন ছেলেটি বুঝতে পারল যে এবার রাক্ষসী তার মাকেও তাড়া করেছে। মায়ের চিন্তায় সে আর পথে হাঁটতে পারছে না। একটা সময় দেখলো যে ঘটির দুধ লাল হয়ে গেছে। আরও কিছু সময় পরে যকন সে দেখল যে ঘটির দুধ স্থীর হয়ে গেছে তখন সে তার মায়ের আশাও ছেড়ে দিল। এবার সে ধিক ধিক করে ঘোড়াল পিঠে করে চলতে লাগল।
হঠাৎ দেখল তার মায়ের শেষ কেথাটাও সত্যি হতে চলেছে। তার ঘটির দুধ ঘুরতে শুরু করেছে। তার মানে হল রাক্ষসী এবার তাকে তাড়া করা শুরু করেছে। প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল ছেলেটি কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যে সে নিজের মনের মধ্যে একটা দৃঢ় সংকল্প করল যে সে যেভাবে হোক নিজেকে তো রক্ষা করবেই, সেই সাথে তার বাবা মা কে যে রাক্ষস খেয়ে ফেলেছে সেই রাক্ষস কে হত্যা করবে।
এই কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রাক্ষসটি তার সামনে এসে হাজির হল। ছেলেটি মানের মধ্যে শক্তি আর সাহস নিয়ে রাক্ষসটিকে সেই ধারাল অস্ত্র দিয়ে হত্যা করতে ছুটে গেল। কিন্তু রাক্ষস টিও তাকে খেতে উদ্যত হল। কিন্তু ছেলেটির সাথে রাক্ষস পেরে উঠল না। ছেলেটির হাতেই প্রাণ দিতে হল ডাইনি রাক্ষসটিকে।
ছেলেটি একটু ক্লান্ত হয়ে পড়ল । একটু বিশ্রাম নিয়ে সে আবার ঘোড়ার পিঠে চলতে শুরু করল। যেতে যেতে এক অজানা রাজ্যে এসে তার রাত হয়ে গেল। একটা বাড়ীতে গিয়ে রাত্রে থাকার জন্য বলল। কিন্তু কোনো ভাবে কেউ তাকে আর তার ঘোড়াকে রাখতে রাজী হলনা। ওই বাড়ির তখন সবাই কান্না করছিল। তারা বলল যে তারা নিজেরাই তো আছে বিপদে। কিভাবে তাকে রাখবে। তখন ছেলেটি তাদের বিপদের কথা জানতে চাইল। সে সময় ওই বাড়ির লোকটা তাকে সব খুলে বলল আর বলল যে এই রাজ্যে যত পরিবার আছে, প্রত্যেক পরিবার থেকে প্রতি রাতে একজন করে লোক ওই রাক্ষসের আহার হিসেবে পাঠাতে হয়। আজকে সেই রাক্ষসের আহার হিসেবে আমার পরিবারের একজন কে পাঠাতে হবে। কিন্তু দুখের বিষয় কাকে রেখে কাকে পাঠাব বাবা তুমি বল।
তখন ছেলেটি একটু ভেবে বলল, যে আজ কাউকে যেতে হবে না। আজ সে নিজেই যাবে রাক্ষসের আহার হিসেবে। তারা সবাই অবাক হয়ে গেল। ছেলেটি তাদের বলল যে, “আপনারা শুধু আমাকে আর আমার এই ঘোড়াকে খাবার দিন আর আমি যা যা চাই সে গুলি জোগাড় করে দিন।” ছেলেটির কথা মতো তারা সবই ব্যস্থা করে দিল। ছেলেটি রাক্ষসের গুহা চিনে নিয়ে সন্ধ্যায় সেই গুহায় গিয়ে হাজির হল আর গুহার মধ্যে তার সংগে আনা সমস্ত জিনিস রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। রাত দুপুরের সময় যখন রাক্ষস গুহায় ফিরল খাবারের জন্য তখন সে তার নি:শ্বাসে মানুষের গন্ধ পেল। রাক্ষস মানুষের গন্ধ পেয়ে বলতে শুরু করল “হাও মাও খাও, মানুষের গন্ধ পাও, যে আসবে তার মাথা ভেঙ্গে খাও ”। আর চিৎকার করে বলল কে রে আমার ঘরের ভেতর??
রাক্ষসের চিৎকার শুনে ছেলেটির ঘুম ভেঙে গেল। সে রাক্ষসকে বলল “ঘরের ভিতরে তোর বাপ”।
তখন রাক্ষসটা হো হো করে হেসে করে হেসে উঠল। আর বলল তুই কি সত্যি আমার বাপ? তাহলে তুই তোর একটা চুল ফেল তো, দেখি তুই কেমন আমার বাপ। তখন ছেলেটি তার সংগে আনা দড়া টা ফেলল রাক্ষসের সামনে। রাক্ষস দড়া টা দেখে তো অবাক। মনে মনে ভাবল এ কেমন চুল রে বাপ!!!
তারপর বলল “তুই সত্যি যদি আমার বাপ হোস তাহলে তোর একটা নখ ফেল তো”
ছেলেটি তখন তার সংগে আনা কদাল টিকে ফেলেদিল রাক্ষসের সামনে। রাক্ষস এমন নখ দেখে তো ভিষন অবাক। মনের মধ্যে আরও সন্দেহ জাগল। তখন রাক্ষস আবার বলল, দেখি তোমার মুখের থু থু ফেল তো।
ছেলেটি তখন তার সংগে আনা এক হাড়ি চুন ফেলে দিল। রাক্ষস সেই চুনকে থু থু ভেবে খেয়ে পরখ করে দেখতে চাইল। যেই না চুনকে থু থু ভেবে মুখে দিল, ওমনি ঝাঁঝালো চুনে তার গাল গেল পুড়ে। জ্বলে যেতে লাগল তার মুখের ভিতর। রাগে ক্ষোভে রাক্ষস তখন ছেলেটিকে আস্ত গিলে খেতে চাইল। তখন ছেলেটি তার কাছে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রাক্ষসকে নিমিষেই মেরে ফেলল। ইতিমধ্যে ভোর হয়ে এসেছে। গ্রামবাসি এসে দেখল যে ছেলেটি রাক্ষস টাকে মেরে ঘুমিয়ে পড়েছে। সবাই তার প্রশংসা করতে লাগল।
কিন্তু মজার ঘটনা হল, রাক্ষসের হত্যার মধ্য দিয়ে ছেলেটির ভাগ্য ফিরে এল। ওই রাজ্যের রাজা ঘোষনা করেছিলেন যে, যে এই রাক্ষসকে মারতে পারবে রাজা তার সাথে নিজের মেয়েকে বিয়ে দেবে এবং রাজ্যের অর্ধেক তাকে লিখে দেবে। রাজার কাছে সংবাদ গেল এক দু:সাহসী ছেলে রাক্ষকে মেরে ফেলেছে। সংগে সংগে রাজা ছেলেটিকে রাজপ্রসাদে নিয়ে গেল। এবং রাজা তার কথা মতো সব কিছু করল। রাজ্যে আবার সুখ ফিরে এল। আমার গল্প শেষ হয়ে গেল আর  আমাকে একটা বড় পান দিল আমি চিবুতে চিবুতে বাড়ি চলে এলাম।

No comments:

Post a Comment