Responsive Ads Here

Thursday, February 7, 2019

Rohu Fish

Rohu Fish  পরিচিতি :: রুই মাছের পরিচিতি ::
বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ দেশ বিশেষ করে মাছে। বাংলাদেশে অসংখ্য মাছ রয়েছে। এর মধ্যে বড় বড় কার্প জাতীয় মাছ আছে যার মধ্যে রুই মাছ (Labeo Rohita) অন্যতম।  রুই মাছ হলো স্বাধু পানিতে চাষ যোগ্য মাছ। এশিয়া মহাদেশে সহজে পাওয়া যায়, এবং জনপ্রিয় কারণ এই মাছ খুবই সুস্বাদু আর এটা খুবই প্রোটিন সমৃদ্ধ মাছ। রুই মাছ দ্রুত বর্ধনশীল আর স্বাভাবিক অবস্থায় পুকুর বা খামারে এক বছরে 35 -- 45 সেন্টিমিটার লম্বা, 700 -- 800 গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। তবে হালদা নদীর রুই মাছের পোনার বৃদ্ধি 2 থেকে 2.5 কেজি পর্যন্ত বাড়ে।

বাসস্থান (Habitat)
রুই মাছ বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও মায়ানমারের নদী সমূহের প্রাকৃতিক প্রজাতি। স্বাদুপানির জলাশয়, পুকুর , নদী, হ্রদ ও মোহনায় পাওয়া যায় এই মাছ। রুই মাছ বাংলাদেশের বড় বড় নদী সমূহে অবাদে বিচরন করে, তবে ডিম ছাড়ার সময় সাধারণত প্লাবনভূমিতে অবস্থান করে। অনন্য স্বাদ, সহজ চাষ পদ্ধতি এবং অর্থনৈতিক গুরত্ব এবং পুষ্টি ঘাটতি মেটাতে শ্রীলংকা, চীন, জাপান, নেপাল, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, এবং আফ্রিকান দেশ গুলোতে ব্যপক ভাবে রুই মাছের চাষ করা হচ্ছে। এবং বর্তমানে ইন্ডিয়ার আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের মিঠা পানিতে রুইয়ের চাষ করা হচ্ছে।

শ্রেণীবিন্যাস :: (Classification)
Phylum :: Chordata
Sub-Phylum :: Vertebrata
Class :: Actionpterygii
Order :: Cypriniformes
Family :: Cyprinidae
Genus :: Labeo
Species :: Labeo Rohita
স্বভাব (Habit)

জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে রুইয়ের পছন্দের আহার হলো প্ল্যাংকটন জাতীয় অর্থাৎ প্রাণীপ্ল্যাংকটন এবং উদ্ভিদপ্ল্যাংকটন জীব। আঙ্গুলিপোনা দশায় (fingerling stage)  প্রধানত প্রাণীপ্ল্যাংকটন গ্রহণ করলেও ডেসমিড (desmids), ফাইটোফ্ল্যাজেট (phytoflagellate), শৈবাল রেণু (algal spore) প্রভৃতিও গ্রহন করে। তরুণ এবং পূর্ণবয়স্ক মাছ পানির মাঝ স্তরের শৈবাল ও নিমজ্জিত উদ্ভিদ বেশি গ্রহণ করে (অর্থাৎ প্রধানত শাকাশী)। রুই মাছের পৌস্টিক নালীতে পচনশীল জৈব পদার্থ ও বালু কাদা ইত্যাদি দেখে তলদেশী খাদক বলে মনে হয়। খুটে খাওয়ার উপযোগী নরম ঝালরযুক্ত ঠোঁট এবং মুখ-গলবিলীয় অঞ্চলে দাঁতের বদলে ধারাল কর্তন আল (edge) দেখে বোঝা যায় রুই মাছ নরম জলজ উদ্ভিদ খেয়ে থাকে। ফুলকায় সরু চুলের মতো ফুলকা - রেকার (gill-raker) দেখে প্রমাণ পাওয়া যায় এই মাছ অতিক্ষুদ্র প।র‌্যাংকটনও ছেঁকে খায়। রুই মাছের পোনা গুলো ঝাঁক বেধে চলে, প্রাপ্ত বয়স্ক মাছ সাধারণত পৃথক জীবন অতিবাহিত করে। রুই মাছ ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রায় বাঁচতে পারে না।

Labeo rohita-র বাহ্যিক গঠন ::
রুই একটি অস্তিময় মাছ। এর দেহ অনেক টা মাকু আকৃতির অর্থাৎ মধ্যভাগ চওড়া ও দুই প্রান্ত ক্রমশ সরু। প্রস্থ অপেক্ষা উচ্চতা বেশি, প্রস্থচ্ছেদ ডিম্বাকার। চলনের সময় পানির গতি বাঁধাপ্রাপ্ত হয় না বলে এ ধরনের আকৃতিকে স্ট্রমলাইন্ড (streamlined) বলে। রুইমাছের দেহ তিন অংশে বিভক্ত। যথা ১। মাথা । ২। দেহকান্ড ও ৩। লেজ।
১। মাথা  
দেহের অগ্রপ্রান্ত থেকে কানকোর পশ্চাৎপ্রান্ত পর্যন্ত অংশটি মাথা। মাথা 4 থেকে 5 ইঞ্চি লম্বা আর পৃষ্ঠভাগ উত্তল। তুন্ড (snout) ভোঁতা, নিচু কিন্তু চোয়ালের সামনে বাড়ানো এবং কোনো পার্শ্বীয় অন্ডবিহীন। মুখ অর্ধচন্দ্রাকার, নিচের দিকে উপপ্রান্তীয়ভাবে অবস্থিত এবং আড়াআড়ি বিস্ত্রত এবং মোটা ঝালরের মতো ঊর্ধ্ব ও নিম্মোষ্ঠে আবৃত। ঊর্ধ্ব চোয়ালের পিঠের দিকে এক জোড়া নরম ও ছোট ম্যাক্সিলারি বার্বেল (maxillary barbels) থাকে।  তুন্ডের পৃষ্ঠদেশে দুচোখের একটু সামনে একজোড়া নাসারন্ধ্র (nostrils) অবস্থিত। প্রত্যেক নাসাছিদ্রের পিছনে ও মাথার দুপাশে একটি করে বড় গোল চোখ রয়েছে। চোখে পাতা থাকে না কিন্তু কর্ণিয়া স্বচ্ছত্বকীয় আবরণে আবৃত। মাথা আঁইশ বিহীন, দেহ কান্ড ও লেজ মিউকাসময় সাইক্লয়েড (cycloid) আঁইশে আবৃত।
মাথার পিছন দিকে দুপাশে ফুলকা- প্রকোষ্ঠকে ঢেকে দুটি বেশ বড় ও পাতলা কানকো (operculum) অবস্থিত। কানকোর নিচের কিনারায় একটি করে পাতলা ব্রাঙ্কিওস্টেগাল পর্দা (branchiostegal) যুক্ত থাকে যা ফুলকা- প্রকোষ্ঠের বড় অর্ধচন্দ্রাকার ছিদ্রকে ঢেকে রাখে।
২। দেহকান্ড (Trunk)
কানকোর শেষভাগ থেকে পায়ু পর্যন্ত দেহের মধ্য অংশটি দেহকান্ড। এ অংশটি চওড়া ও বিভিন্ন ধরনের পাখনা (fin) বহন করে। পাখনাগুলো পূর্ণ বিকশিত এবং অস্থিময় পাখনা-রশ্নি (fin rays) যুক্ত। দেহকান্ডের পশ্চাৎপ্রান্তের অঙ্কীয়দিকে ঠিক মাঝ বরাবর তিনটি ছোট ছিদ্র থাকে। প্রথমে পায়ু ছিদ্র মাঝে জননছিদ্র এবং সবশেষে রেচনছিদ্র।
পাখনা সমূহ (Fins) :: মাছের চলনাঙ্গকে পাখনা বলে। পাখনা সাধারণত চাপা ও পাখনা রশ্নি যুক্ত হয়। পাকনার ভিতরে অবস্থিত সমান্তরালভাবে সজ্জিত সূক্ষ শলাকরা অন্তকঙ্কালকে পাখনা রশ্নি বলে। রুইমাছের মোট পাঁচ ধরনের পাখনা দেখা যায়। 

পৃষ্ঠপাখনা (Dorsal fin)
 দেহকান্ডের মাঝ বরাবরের পেছনে বড়, কিছুটা রম্বস আকারের একটি মাত্র পৃষ্ঠ-পাখনা অবস্থিত। এর উপরের দিকের মধ্যভাগ অবতল। এতে ১৪ থেকে ১৬ টি পাকনা রশ্নি থাকে।
বক্ষ পাখনা (pectoral fin)
কানকোর ঠিক পেছনে দেহকান্ডের সম্মুখ পার্শ্বদিকে একজোড়া বক্ষ-পাখনা রয়েছে। প্রতিটি পাখনা ১৭ থেকে ১৮ টি পাখনা রশ্নি যুক্ত।

শ্রোণী পাখনা (pelvic fin)
একজোড়া শ্রোণী পাখনা বক্ষ পাখনার সামান্য পিছনে অবস্থিত এবং ৯টি করে পাখনা রশ্নি যুক্ত।
পায়ু পাখনা ::
পায়ুর ঠিক পিছনে দেহের অঙ্কদেশের মধ্যরেখা বরাবর একটি পায় পাখনা থাকে। এটি ৬ থেকে ৭টি পাখনা রশ্নি যুক্ত।

পুচ্ছ পাখনা (Caudal Fin)
লেজের পশ্চাতে অবস্থিত পাখনাই পুচ্ছ পাখনা। এতে ১৯ টি পাখনা রশ্নি বিদ্যমান।
রুই মাছের পুচ্ছ পাখনা এর চলাচলে এবং অবশিষ্ট পাখনা সমূহ দেহের ভার সাম্য রক্ষায় কাজ করে। দেহের দুপাশে একসারি ছোট ছোট গর্ত আছে যা আইঁশের নিচে অবস্থিত একটি লম্বা খাদের সাথে যুক্ত। এই খাদ এবং গর্তের সমন্বয়ে মাছের পার্শ্ব রেখাতন্ত্র (lateral line organ) গঠিত। এতে অবস্থিত সংবেদী কোষ পানির তরঙ্গ থেকে পানির গুণাগুণ সংক্রান্ত রাসায়নিক সংবেদন গ্রহন করে।

৩। লেজ (Tail) ::
পায়ু পরবর্তী অংশটি হলো লেজ। এর শীর্ষে আছে হোমোসার্কাল ধরনের পুচ্ছ-পাখনা। এটি উল্লম্বতলে (Vertical plane) প্রসারিত এবং পিছনে, উপরে ও নিচে দুটি প্রতিসম বাহ্যিক খন্ডে বিভক্ত। ডার্মাল রশ্নিগুলো উপরে ও নিচের খন্ডে বড় এবং মাঝখানে ছোট।

আঁইশ (Scales) 
রুইমাছের দেহকান্ড ও লেজ মিউকাসময় সাইক্লয়েড (cycloid) ধরনের ( কারণ গোলাকৃতি) আঁইশে আবৃত। এগুলো পাতলা, প্রায় গোল ও রুপালী চকচকে। পৃষ্ঠদেশীয় আঁইশের কেন্দ্রে লালচে প্রান্ত কালো রংয়ের। কেন্দ্রর লালচে রং জনন ‍ঋতুতে আরও গাঢ় ও উজ্জল হয়। জলচর উদ্ভিদসমৃদ্ধ পরিবেশের রুই মাছে পৃষ্ঠদেশের রং লালচে - সবুজ হতে পারে। আঁইশের এককেন্দ্রিক বৃত্তাকার স্তরে স্তরে অস্থি-উপাদান জমা হওয়ায় আঁইশের উপরিভাগে বৃত্তাকার উঁচু আল ও খাদ সৃষ্টি হয়। স্তরগুলোর কেন্দ্রটি হচ্ছে ফোকাস। এটি সাধারণত একপাশে থাকে। উঁচু আলগুলোকে বলে সার্কুলাস (বহু বচনে - সার্কুলি) বা বৃদ্ধি রেখা । এগুলোর সাহায়্যে বাৎসরিক বৃদ্ধির ও বিভিন্ন ঋতুতে বৃদ্ধি সম্মন্ধে প্রকৃত ধারণা পাওয়া যায়। সাধারণত বসন্তকালে ও গ্রীস্ম কালে আঁইশের বৃদ্ধি হয়। আঁইশের সম্মুখভাগ তন্তুময় যোজক টিস্যু- নির্মিত এবং ডার্মিসের পকেটে প্রবিষ্ট থাকে। পশ্চাৎভাগ ডেন্টিন- নির্মিত ও উন্মুক্ত। উন্মক্ত অংশে থাকে স্টষ্ট বৃদ্ধিরেখা ও অনেক রঞ্জক কোষ। আঁইশগুলো পরস্পরকে আংশিক ঢেকে লম্বালম্বি ও কোণাকুণি সারিতে বিন্যস্ত থাকে। আঁইশগুলো সকসময়ই মিউকাসের পাতলা পিচ্ছিল আস্তরণে আবৃত থাকে।
 
সবশেষে আপনাদের বিনোদনের জন্য চমৎকার একটি মাছ ধরার ( #FishCatching ) ভিডিও শেয়ার করলাম। ভিডিওটি দেখলে আপনার মন ভাল হয়ে যাবে। 
          

No comments:

Post a Comment